সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করলে সংক্রমণ কমবে

স্বাস্থ্য ডেস্ক : কেউ হাসপাতালে সেবা নিতে এসে আবার নতুন কোন রোগে আক্রান্ত হওয়া উচিত নয়। তবুও বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর কয়েকশ মিলিয়ন মানুষ স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ ( health care-associated infections সংক্ষেপে  HAIs ) দ্বারা আক্রান্ত হয়। অথচ যার বেশিরভাগ প্রতিরোধযোগ্য।

স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ বা HAIs কি?
যে সংক্রমণে রোগী সেবা গ্রহণের সময় হাসপাতালে বা যেকোন সেবা কেন্দ্রে আক্রান্ত হয় ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে, যেটা তার ওই হাসপাতালে ভর্তির সময় থাকে না। দর্শনার্থী, পরিবারের সদস্য এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও এইচআইএ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। এইচআইএর বেশিরভাগই এক বা একাধিক সাধারণ ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী অণুজীবের কারণে ঘটে। সাধারণ এইচআইএর মধ্যে প্রস্রাব, বুক, রক্ত এবং ক্ষত সংক্রমণ অন্তর্ভুক্ত। কোন দেশ এমনকি সর্বাধিক উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বা সর্বাধিক পরিশীলিত রাষ্ট্র ও HAIs থেকে মুক্ত দাবি করতে পারছে না।

স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ বা এইচএআই (HAIs) রোধ করা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। HAIs রোগীদের চলমান ক্লিনিক্যাল যত্নের পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকি টিকে খাপ খাওয়াতে, প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং পরিচালনা করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থপনার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

HAIs কমানোর জন্য সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (Infection Prevention and Control সংক্ষেপে IPC) ব্যবস্থপনা জোরদার করা অবশ্যক।

* সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বা আইপিসি কি?
এটি একটি ব্যবহারিক, প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতি যা রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এড়ানো যায় না। এমন সংক্রমণ হতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। কার্যকর আইপিসির জন্য নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে সেবাকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সেবাগ্রহীতা বা রোগী অর্থাৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সব স্তরে অবিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

আইপিসি কিভাবে স্বাস্থ্যসেবায় সংক্রমণ কমায়?
আইপিসি রোগীর সুরক্ষা এবং যত্নের মানের ক্ষেত্রে অনন্য। কারণ এটি প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীর সাথে প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা মিথস্ক্রিয়ায় সর্বজনীনভাবে প্রাসঙ্গিক। অনেক প্রমাণ রয়েছে, আইপিসির সেরা অনুশীলনগুলো প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংক্রমণ বা HAIs উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে  এবং রোগীর ক্ষতিও কমেছে। আইপিসি রাজনৈতিক ও ম্যানেজমেন্ট দ্বারা সমর্থিত হয়ে গেলে, ক্লিনিকাল পরিষেবাদি এবং রোগীর সুরক্ষা সংস্কৃতিতে একিভূত হয়ে সেরা ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।


লেখক ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন

কার্যকর আইসিসির মাধ্যমে সংক্রমণ কমানোর প্রমাণ: ( তথ্যসূত্রঃ infection  Prevention  and Control  global unit WHO. 2016)
৩০% হ্রাস: কার্যকর আইপিসি ব্যবস্থপনা HAIs  ৩০% এরও বেশি হ্রাস ঘটায়।
২৫-৫৭% হ্রাস: যথাযথ নজরদারিতে HAIs ২৫-৫৭% হ্রাস পায়।
৫০% হ্রাস: স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে  হ্যান্ড হাইজিন অনুশীলনে রোগজীবাণু সংক্রমণ ৫০% হ্রাস করতে পারে।
১৩-৫০% হ্রাস: ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর করা স্ট্রং আইপিসি পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় লাইন-সম্পর্কিত রক্ত প্রবাহের সংক্রমণকে ৫০%, সার্জিকাল সাইটের সংক্রমণ (SSI) ১৭% এবং এমআরএসএ ব্যাকেরেমিয়া ১৩% হ্রাস করেছে।
৫৬ % হ্রাস: জাতীয় লক্ষ্য অনুসারে ইংল্যান্ডে চার বছরের সময়কালে এমআরএসএ ৫৬% হ্রাস পেয়েছে ।
৪৪%  হ্রাস: একটি সুরক্ষা সংস্কৃতি এবং প্রতিরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে আফ্রিকান হাসপাতালে এসএসআই ঝুঁকি ৪৪% হ্রাস করেছে।
৮০%  সম্মতি: অস্ট্রেলিয়া দেশজুড়ে ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে হাসপাতালে ৮০% হাতের স্বাস্থ্যবিধি সম্মতি অর্জন করেছে এবং ধরে রেখেছিল।

উপরের আলোচনা থেকে সহজে বুঝা যায় সংক্রমণ কমিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা গেলে আমরা অনেকগুলো অনাকাঙ্খিত ক্ষতি থেকে বাঁচব। এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হলে হাসপাতালে সংক্রমণ কমবে। এ ব্যবস্থার জোরালো ভূমিকা নিশ্চিত করতে গেলে আমাদের রাজনৈতিক এবং টপ ম্যানেজম্যান্টের সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: নার্সিং কর্মকর্তা, ডেপুটি ফোকাল পারসন
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটি
জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার।

এই বিভাগের আরো খবর